ঝুঁকিকে কমিয়ে আনার জন্য বীমা হলো একটি উত্তম সহায়ক মাধ্যম

Bank Bima Shilpa    ১২:২৩ পিএম, ২০২১-০২-০১    1403


ঝুঁকিকে কমিয়ে আনার জন্য বীমা হলো একটি উত্তম সহায়ক মাধ্যম

সাঈদ আহমেদ, চেয়ারম্যান : গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
সাঈদ আহমেদ একজন উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি হিসেবে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ চেক টেকনোলজি লিমিটেড ও পিউরিটি ফুডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ভ্যানটেজ সিকিউরিটিজ লিমিটেড, সিটি হোমস্ লিমিটেড ও আল-তাইয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নাহার গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রাঃ) লিমিটেড এবং মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির পরিচালক। তিনি দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড (পদ্মা ব্যাংক লিঃ) এর পরিচালনা পর্ষদের প্রাক্তন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এবং একজন উদ্যোক্তা শেয়ার হোল্ডার। এছাড়া তিনি আহমেদ শিপিং লাইন্স, আহমেদ ইনল্যান্ড শিপিং এজেন্সী, এ.কে. ইন্টারন্যাশনাল এবং আহমেদ এয়ারওয়েজ সার্ভিসেস এর স্বত্বাধিকারী। তিনি বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশন এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে কার্যকরী পরিষদের সদস্য।
তিনি লায়ন্স ক্লাব অফ ঢাকা সেন্ট্রাল ইস্ট এর প্রেসিডেন্ট এবং লায়ন্স ক্লাব অফ ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫ বি-২, বাংলাদেশ এর রিজিওন চেয়ারপারসন। এছাড়া তিনি ঢাকা ক্লাব লিমিটেড, গুলশান সোসাইটি, উত্তরা ক্লাব লিমিটেড, কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড, বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাব লিমিটেড, চট্টগ্রাম বোট ক্লাব লিমিটেড এবং অল কমিউনিটি ক্লাব লিমিটেডের স্থায়ী সদস্য। সাঈদ আহমেদ শরীয়তপুর জেলা সমিতির পৃষ্ঠপোষকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। কথা হলো বীমা শিল্পের বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স নিয়ে, এখানে তা তুলে ধরা হলো...
ব্যাংক বীমা শিল্প : গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স এর বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা সম্পর্কে বলুন?
সাঈদ আহমেদ : ধন্যবাদ আপনার প্রশ্নের জন্য। গ্রাহকদের মানসম্পন্ন এবং দ্রুত সেবা প্রদানের অঙ্গিকার নিয়ে বিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদ যারা প্রত্যেকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক জগতে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় নিজস্ব স্বকিয়তায় মহিমান্বিত এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা বীমা ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স। যার ফলশ্রুতিতে আমরা নিয়মিত গ্রাহক সেবা বিশেষ করে সম্মানিত পলিসি হোল্ডারের বীমা দাবী এবং সম্মানিত শেয়ার মালিকদের নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে আসছি। গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স ২০০০ সনে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৫ সাল থেকে আমরা শেয়ার মালিকদের এ পর্যন্ত নিয়মিতভাবে বোনাস শেয়ার এবং নগদ লভ্যাংশ প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি। আপনি অবগত আছেন গত ২৬ ডিসেম্বর আমাদের ২০ তম বার্ষিক সাধারণ সভা ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সে ভার্চুয়াল সভায় সম্মানিত শেয়ারমালিকদের সম্মূখে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের ২০১৯ সমাপ্ত বছরের আয় ব্যয় এর নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরনী উপস্থাপন করেছি তাতে দেখা যায় ২০১৯ সমাপনী বছরে গ্রস প্রিমিয়াম ২৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৬৮ কোটি ২২ লাখ টাকা হয়েছে, নিট প্রিমিয়াম ২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৪১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা হয়েছে, আন্ডার রাইটিং প্রফিট (অবলিখন মুনাফা) ৪ কোটি ২ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা হয়েছে, এফডিআর ৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ২০১৯ সালে মোট সম্পদ ১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৯৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হয়েছে এবং ২০১৯ সালে ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে করপূর্ববর্তী মোট মুনাফা হয়েছে ৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মুলধন ১০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মুলধন হয়েছে ৪০ কোটি ৫ লাখ টাকা। তাছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি সারাদেশে ৫৪ টি শাখার মাধ্যমে নন লাইফ বীমা ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। তাই আমি মনে করি বিশ্বব্যাপি করোনা মহামারীর সাথে মোকাবেলা করে আমরা যখন টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছি তখন ভবিষ্যতে ব্যবসায়িকভাবে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স আরো এগিয়ে যাবো এমনটাই প্রত্যাশা করি।
ব্যাংক বীমা শিল্প : বীমা সেক্টরের স্বচ্ছতা ফেরাতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে। পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা আসবে কি, আপনি কি মনে করেন?
সাঈদ আহমেদ : দেখুন যুগে যুগে সবকিছুর একটা পরিবর্তন আসে। বীমাখাতও কিন্তু সে পরিবর্তনের আওতার বাহিরে নয়। আমাদের দেশে বীমা দিবস, বীমা মেলা সহ পুরো বীমা খাত আজ প্রযুক্তির আওতায় এসেছে। এই খাতের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময় সভা সেমিনার হচ্ছে। এটা কিন্তু ইতি পূর্বে কেউ ভাবতেও পারেনি কিন্তু আজ বাস্তবে তা হচ্ছে। বীমাকে দেখভাল করার জন্যই শক্তিশালি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি ইতিপূর্বে কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স কিংবা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে এ পর্যন্ত যারা নিয়ন্ত্রণ করেছে তারা এই বীমা পেশা, বীমা সম্পর্কে দক্ষতা কিংবা বীমা সেক্টরে কাজ করা হয়তবা  হাতে গোনা দু’একজন ছাড়া বাকীরা সবাই আমলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেক্টর থেকে এসেছে যার জন্য এই সেক্টরের প্রতি নজর খুব একটা কমই ছিল। তাই যে যার মত করে বীমা সেক্টরকে পরিচালনা করেছে যার জন্য স্বচ্ছতা ইতিপূর্বে ছিলনা বললেই চলে। যেকোনভাবেই হোকনা কেন বীমা পেশা, বীমা কর্মী এবং বীমা ব্যবসা ইতিপূর্বে বাংলাদেশে অবহেলিত ছিল। তাছাড়া, বীমা সেক্টরে শিক্ষিত লোকেরও একটা সময় অভাব ছিল। কিছুটা দেরিতে হলেও মানুষ আজ বুঝতে শিখছে যেকোন কাজ কিংবা ব্যবসার ভিতরে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে তার সুনাম কিংবা সুফল কোনটাই আশা করা যায় না। তাই আমি মনে করি বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন পরে হলেও একজন দক্ষ বীমাবিদকে চেয়ারম্যান হিসেবে পেয়েছে। তাছাড়া বর্তমান সরকার যেভাবে বীমা খাতের উপর নজর দিয়েছে তাতে মনে হয় অচিরেই এ খাতে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার মাধ্যমে গ্রাহকরা সঠিক সেবা পাবে। অতএব আমি মনে করি এই সেক্টরে পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার।
ব্যাংক বীমা শিল্প : গ্রাহকের অভিযোগ আছে নন লাইফ বীমা কোম্পানী থেকে বীমা দাবী পেতে নানান জটিলতার সম্মুখিন হতে হয়। এ সম্পর্কে আপনি কি বলবেন?
সাঈদ আহমেদ : আপনি একটু আগে যে প্রশ্ন করেছেন সে প্রশ্নের সাথে এটার কিন্তু একটা সামঞ্জস্যতা রয়েছে। আপনি ইতিপূর্বে স্বচ্ছতার কথা বলেছেন স্বচ্ছতা কিন্তু নিয়মের ভিতর থেকেই আসে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেমন নিয়মের ভেতর থেকেই স্বচ্ছতায় আসতে হয় এবং গ্রাহকদের সেবা দিতে হয় তেমনি গ্রাহকদেরও নিয়মের ভিতর থেকেই স্বচ্ছতার মাধ্যমেই বিভিন্ন সেবা নিতে হয়। আমাদের দেশে অনেকেই বীমা পলিসি ক্রয় করে কিন্তু সে কখনও নিয়ম কানুন ভালভাবে দেখেও না বা দেখার চেষ্টাও সে করেনা যার জন্য একটা সময় তাকে কিছুটা জটিলতায় পরতে হয়। তাছাড়া একজন বীমাকারী তাঁর বীমা পলিসির প্রিমিয়াম কমাবার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। অথচ তিনি একবারও ভাবেন না যে, কোন দূর্ঘটনা হলে বীমা দাবী আদায়ের ক্ষেত্রে ঐ কৌশল তার জন্য বুমেরাং হবে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যারা পলিসি বিক্রয় করে তারা হয়ত নিজে লাভবান হওয়া কিংবা টার্গেট পুরণ করা কিংবা প্রতিষ্ঠানের চাপের জন্য পলিসি ক্রয়কারীর ইচ্ছানুযায়ী কখনো কখনো নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে পলিসি ক্রয় করেন। আপনি যখন বীমা পলিসি ক্রয় করেন হোক সে লাইফ কিংবা নন লাইফ তখন আপনার বীমার নিয়মকানুনগুলো ভালোভাবে জানা দরকার আর যারা পলিসি বিক্রয় করে তাদেরও নিয়মকানুন সম্পর্কে পলিসি ক্রয়কারীকে অবগত করানো দরকার। আপনি হয়তবা জানবেন নন লাইফ বীমা দাবী পাওয়ার আশায় অনেকেই নানান ছলচাতুরীর আশ্রয় নেন যার কারনে যারা সঠিকভাবে বীমা দাবী প্রাপ্য তাদেরও অনেক সময় বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়। তাই আপনার মাধ্যমে একটি কথা জানাতে চাই। সবাই বীমা কোম্পানীর দোষ দিয়ে দায় এড়িয়ে যায়। একটি কথা না বললেই নয়, দেখুন ঝুঁকি থেকেই কিন্তু বীমার উৎপত্তি। ঝুঁকি হলো এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে আমরা ভবিষ্যতের আর্থিক প্রতিকূলতা বা ক্ষতির সম্ভাবনাকে পারিসাংখ্যিকভাবে পরিমাপ করতে পারি। ঝুঁকিকে সম্পূর্ণরুপে বা সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব নয়।  ঝুঁকিকে কমিয়ে বা এড়িয়ে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য বীমা হলো একটি উত্তম সহায়ক মাধ্যম। বীমা হলো বিমাকারী ও বীমা গ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত একটি ক্ষতি পূরনের চুক্তি। এ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এক বা একাধিক পক্ষ ঝুঁকি বহনকারী পক্ষের নিকট থেকে নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম এর বিনিময়ে সমুদয় বা আংশিক বা নির্দিষ্ট কিছু ঝুঁকির দায়ভার বহনে সম্মত হয় এবং বীমা গ্রহীতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বীমাকারী চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকে। এখানে কথা একটাই এই চুক্তিটা উভয় পক্ষেরই সুচারু রুপে পর্যালোচনা করতে হবে। তখন আর কাউকেই জটিলতায় পরতে হবে না। পলিসি ক্রয়কারী এখন বীমা দাবী কিংবা সেবা না পেলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসহ সরাসরি অভিযোগ করার অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে তিনি সরাসরি অভিযোগ করতে পারেন।
ব্যাংক বীমা শিল্প : বীমা দাবী পরিশোধে সার্ভেয়ার কতটুকু স্বচ্ছতা পালন করে বলে আপনি মনে করেন?
সাঈদ আহমেদ : নন লাইফ বীমা চুক্তির প্রধান শর্তই হচ্ছে বীমাগ্রহীতা বীমাকৃত বিষয়বস্তুর ক্ষতির সম্মুখীন হলে বীমাকারী তার ক্ষতিপূরণ করবে। শুধু মাত্র সম্পত্তি বীমার ক্ষেত্রে বীমাকৃত বিষয়বস্তুর ক্ষতি হলে বীমাকারী বীমাগ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে। আর তার জন্যই বীমা গ্রহীতার নিকট থেকে আবেদন পত্র পাওয়ার পর বীমাকারীকে দাবির বৈধতা নিশ্চিত করন, ক্ষতির তদন্ত যেমন বীমা গ্রহীতার নিকট থেকে বীমাকারী আবেদনপত্র পাওয়ার পর আবেদনপত্রে উল্লেখিত অগ্নিকান্ডের কারণসমূহের সুষ্ঠ তদন্ত করা দরকার হয় সেক্ষেত্রে কেন আগুন লেগেছিল এবং আগুন নেভানোর জন্য কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তার তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার জন্য একজন সার্ভেয়ার অথবা মধ্যস্ততাকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার দ্বারা ক্ষয়ক্ষতির নিরুপন করা হয়। তাছাড়া বীমাকারীর সার্ভেয়ার প্রতিবেদন পছন্দ না হলে সার্ভেয়ার পরিবর্তন কিংবা একটা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ কিংবা আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে যার জন্য সার্ভেয়ারের স্বচ্ছতা পালন না করার কোন সুযোগ নেই।
ব্যাংক বীমা শিল্প : ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায় ব্যবসা ভাল হওয়া সত্বেও Reserve for Exceptional Loss ফান্ডে কোন সঞ্চিতি রাখা হয়নি এর ব্যাখ্যা জানতে চাচ্ছি ?
সাঈদ আহমেদ : আপনি যে প্রশ্নটি করেছেন তার কিছু জবাব আগের প্রশ্নে দিয়েছি তারপরও আপনি যেহেতু জানতে চেয়েছেন ঝুঁকির সঞ্চিতি হিসেবে ফান্ডে বর্তমানে ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা রয়েছে। সঙ্গত কারনেই বর্তমানে আমরা করোনা মহামারীর ধাক্কা সামাল দিয়ে যাচ্ছি। এই করোনার ধাক্কা সামাল দিতে গিয়েও আমরা রিজার্ভে হাত দেইনি। আমরা কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন ভাতা পরিশোধ, বোনাসসহ যাবতীয় সুবিধা প্রদান করেছি, শেয়ার মালিকদের লভ্যাংশ দিয়েছি সবকিছুই মুনাফা থেকে দেয়া হয়েছে তাছাড়া ৩২ কোটি টাকার উপরে আমাদের এফডিআর রয়েছে। তাই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। ব্যবসার টাকা এফডিআরএ রয়েছে সেখান থেকে আমরা লাভবান হচ্ছি। আগামীতে সঞ্চিতি আরো বাড়বে এবং আমরা সবদিক খেয়াল রেখে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছি।
ব্যাংক বীমা শিল্প : আমাদের দেশে জাতীয় উন্নয়নে বীমার অবদান কিংবা বীমা কি ধরনের ভুমিকা পালন করছে বলে আপনি মনে করেন?
সাঈদ আহমেদ : খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। আমাদের দেশে জাতীয় উন্নয়নে বীমার অবদান অনস্বীকার্য। প্রথমে আমি বলব বেকারত্ব দূরীকরণে বীমা যথেষ্ট ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। বীমা কোম্পানীর সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রচুর লোক কাজ করে। ফলে দেশের বেকারত্বের সংখ্যা হ্রাস পায়, মানুষের আয় বাড়ে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায় এবং জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি ঘটে। আপনি অবগত আছেন লাইফ নন লাইফসহ বাংলাদেশে মোট ৭৮টি বীমা কোম্পানী চালু রয়েছে। শুধু আমাদের গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স দেশব্যাপী ৫৪টি শাখার মাধ্যমে ৬৫০ এর অধিক কর্মকর্তা কর্মচারী তাদের রুটি রুজির ব্যয় নির্বাহ করে যাচ্ছে। তাই আমি বলতে চাই বেকারত্ব দূরীকরণে বীমার অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তাছাড়া বীমা ব্যবসা দেশের আমদানি ও রপ্তানি ব্যবস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। রপ্তানিকৃত পণ্য ও পরিবহন অবশ্যই বীমাকৃত হতে হয়। আবার আমাদের দেশের বীমা কোম্পানীগুলো বিদেশি বীমা কোম্পানীর সাথে পুনঃবীমা ও দ্বৈতবীমা চুক্তি করে থাকে। এ ব্যবসায় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। তাই আমি মনে করি দেশের জাতীয় উন্নয়নে বীমা ব্যাপক ভুমিকা রেখে চলছে যেমন সঞ্চয় বৃদ্ধি, মূলধন গঠন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জাতীয় সম্পদ রক্ষা, ঝুঁকি বণ্টন, ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা হ্রাস, ব্যবসায় সম্প্রসারণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এর সুযোগ বৃদ্ধি, রপ্তানী আয় বৃদ্ধি, জাতীয় আয় বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সর্ব ক্ষেত্রেই আমি মনে করি বীমার ব্যাপক অবদান রয়েছে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বীমা সেক্টর তথা দেশে ব্যবসা ও বাণিজ্যের বিকাশ সাধনে সাহায্য করে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে চলছে এই বীমা খাত।  
ব্যাংক বীমা শিল্প : বীমা কোম্পানীগুলো অতিরিক্ত ব্যয় করে আমরা বিভিন্ন সময়ে শুনে থাকি, এ সম্পর্কে আপনি কি বলবেন কিংবা গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স সে ক্ষেত্রে কি অবস্থায় রয়েছে?
সাঈদ আহমেদ : দেখুন আমরাও প্রায়ই শুনে থাকি বীমা সেক্টরের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। আসলে এখানে উপলব্ধির একটা বিষয় রয়েছে। আপনাকে যদি বলা হয় আপনার আজ থেকে ২০ বছর আগের জীবনযাপনের ব্যয় এবং বর্তমান জীবনযাপনের ব্যয় একরকম কিনা সেক্ষেত্রে আপনি কি জবাব দিবেন? ১৯৫৮ সালের ব্যয়ের হিসাব যদি এখন করেন তাহলে অতিরিক্ত ব্যয় বলা ঠিক আছে কিন্তু বর্তমান অবস্থানে দাড়িয়ে আপনি সে হিসেব দিয়ে চলতে পারবেন না। বর্তমানের বাজার পরিস্থিতি আমূল পরিবর্তন হয়েছে, যা অতিরিক্ত ব্যয়ের অন্যতম কারণ। এছাড়া ১৯৫৮ সালের সাথে এখনকার তুলনা করলে মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যাতায়াত, বিজ্ঞাপন, কর্মচারিদের বেতন-ভাতা ইত্যাদির খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ স্ফীতির পরিমাণ অনেক গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি ২০০৫ সালে বীমা রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারা ১৩৩ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১৯৯১ সালে সরকার প্রায় সব খরচের উপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপ করেছে। এর ফলে এটি আমাদের ব্যয়ের খাতে যুক্ত হয়েছে। এখানে আরো উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ১৯৫৮ সালে যখন বীমা বিধি জারি করা হয়, তখন এতে মূসক’র কোন বিধান ছিল না। আমাদের যদি ভ্যাট দিতে না হতো তাহলে নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকতে সক্ষম হতাম। যদিও খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি (সিআরসি) বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রিমিয়াম হার হ্রাস করেছে। এই হ্রাসকৃত প্রিমিয়াম বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য বোঝা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বাজারে অনেকগুলো সাধারণ বীমা কোম্পানি আছে। যেহেতু আমাদের বীমা শিল্পের আকার তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট তাই কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা অনেক তীব্র। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে কোম্পানিগুলোকে দক্ষ জনবল আকর্ষণ, নিয়োগ এবং ধরে রাখার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়।
তাছাড়া আমরা প্রায়শই আমাদের কর্মচারিদের দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে পাঠিয়ে থাকি। এতে যদিও আমাদের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে আমরা যোগ্যতাসম্পন্ন ও দক্ষ পেশাদার জনবল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া বীমা শিল্প সম্মিলিতভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ কারনেও বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যয় অনেকাংশে বেড়ে গেছে। তবে আমাদের কোম্পানী গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্ধারিত ব্যয় সীমার মধ্যে থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে।
ব্যাংক বীমা শিল্প : শেয়ার হোল্ডার, পলিসি হোল্ডার এবং কোম্পানীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে কোম্পানীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কি বলবেন?
সাঈদ আহমেদ : দেখেন শেয়ার হোল্ডার, পলিসি হোল্ডার এবং কোম্পানীর কর্মকর্তা-কর্মচারী এদের নিয়েই গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স। যেমন শরীরের কোন অংশকে বাদ দিয়ে নিজেকে কল্পনা করা যায় না তেমনি এদেরকে ছাড়াও আমরা গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের সমৃদ্ধি বলেন অগ্রগতি বলেন কোনটাই কল্পনা করতে পারি না। তাই আমি শেয়ার মালিকদের বলতে চাই আপনাদের বিনিয়োগের সুরক্ষায় আমাদের পরিচালনা পর্ষদ, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সুদীর্ঘ ৫৪ বছরের অধিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বীমা ব্যাক্তিত্ব কোম্পানির সিনিয়র কনসালট্যান্ট, সকল শাখা ব্যবস্থাপক, উন্নয়ন কর্মকর্তাবৃন্দসহ সকল স্তরের নিবেদিতপ্রাণ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অতন্ত্র প্রহরীর ন্যায় কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি ভবিষ্যতে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের ভিত্তি আরো সুদৃঢ় হবে, আপনারা পাবেন প্রত্যাশিত ডিভিডেন্ড গেইন এবং ক্যাপিটাল গেইন, পলিসি হোল্ডার পাবে সর্বোচ্চ সেবা সুরক্ষা এবং সমৃদ্ধির ছোয়া পাবে কোম্পানীর সর্বস্তরের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ। ধন্যবাদ।


রিটেলেড নিউজ

দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে বীমা সরাসরি জড়িত

দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে বীমা সরাসরি জড়িত

A. B. Howlader

এস এম নুরুজ্জামান, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এস এম নুরুজ্... বিস্তারিত

মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে বীমার গুরুত্ব অনস্বীকার্য

মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে বীমার গুরুত্ব অনস্বীকার্য

A. B. Howlader

মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী ল... বিস্তারিত

তৃতীয় পক্ষ ঝুঁকি বীমা বাতিলে রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার-সাঈদ আহমেদ, চেয়ারম্যান, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড

তৃতীয় পক্ষ ঝুঁকি বীমা বাতিলে রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার-সাঈদ আহমেদ, চেয়ারম্যান, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড

A. B. Howlader

সাঈদ আহমেদ একজন উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি হিসেবে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ চেক টেক... বিস্তারিত

 অর্থনৈতিক  বিবেচনায় চার্টার্ড লাইফ শুরু থেকেই সকল প্রকার বীমা সুবিধা দিয়ে আসছে -এস এম জিয়াউল হক, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, চার্টার্ড লাইফ ইন্সু্রেন্স কোম্পানী লিমিটেড।

অর্থনৈতিক বিবেচনায় চার্টার্ড লাইফ শুরু থেকেই সকল প্রকার বীমা সুবিধা দিয়ে আসছে -এস এম জিয়াউল হক, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, চার্টার্ড লাইফ ইন্সু্রেন্স কোম্পানী লিমিটেড।

Bank Bima Shilpa

সামাজিক নিরাপত্তা, সেবার মানুষিকতা নিয়ে দেশ বিদেশের প্রথিতযশা ব্যাক্তিত্বের সমন্বয়ে উভয় পুঁজিব... বিস্তারিত

বাধ্য না হলে কেউ ইন্স্যুরেন্স করতে আসেনা অথচ জীবন ও সম্পদের একমাত্র নিরাপত্তা দেয় ইন্স্যুরেন্স-মো. মোশারফ হোসেন, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

বাধ্য না হলে কেউ ইন্স্যুরেন্স করতে আসেনা অথচ জীবন ও সম্পদের একমাত্র নিরাপত্তা দেয় ইন্স্যুরেন্স-মো. মোশারফ হোসেন, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

Bank Bima Shilpa

বিশিষ্ট বীমা ব্যাক্তিত্ব মো. মোশারফ হোসেন নিজ কোম্পানির পাশাপাশি বীমা খাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্... বিস্তারিত

টেকসই অর্থনীতির অন্যতম উপাদান বীমা-হাসান তারেক, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা : কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড

টেকসই অর্থনীতির অন্যতম উপাদান বীমা-হাসান তারেক, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা : কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড

Bank Bima Shilpa

হাসান তারেক, নন-লাইফ বীমা সেক্টরের অভিজ্ঞতালব্দ, হাসোজ্জ্যল ও সদালাপী একজন উদীয়মান বীমা ব্যক্তিত... বিস্তারিত

সর্বশেষ

PSI of  Mir Akhter 31March 2024

PSI of Mir Akhter 31March 2024

Bank Bima Shilpa

PSI of  Mir Akhter 31March 2024 ... বিস্তারিত

ন্যাশনাল লাইফের স্বাস্থ্য বীমার ছায়াতলে বিকেএসপির খেলোয়ার

ন্যাশনাল লাইফের স্বাস্থ্য বীমার ছায়াতলে বিকেএসপির খেলোয়ার

Bank Bima Shilpa

বিবিএস নিউজ: বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপির খেলোয়াড়দের গ্রুপ ও স্বাস্থ্য বীমা সুবি... বিস্তারিত

পপুলার লাইফের ৬ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার বীমা দাবী পরিশোধ

পপুলার লাইফের ৬ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার বীমা দাবী পরিশোধ

Bank Bima Shilpa

বিবিএস নিউজ : ধারাবাহিক বীমা দাবী পরিশোধের অংশ হিসেবে সম্প্রতি পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী... বিস্তারিত

সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স’র ২৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স’র ২৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

Bank Bima Shilpa

নিজস্ব প্রতিবেদক// পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ননলাইফ বীমা কোম্পানী  সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কো... বিস্তারিত